চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবরদখল করে বিএনপি নেতা বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত

মোহাম্মদ উল্লাহ-চকরিয়া (কক্সবাজার)

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ইব্রাহিম খলিল নামে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন বিএনপি নেতা শাহিন মুরাদ ও ভাই ইকরামুল হক।উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনায় ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।যে কোন মুহুর্তে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও জবর দখলকারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় ও এলাকাবাসী।

এদিকে এ জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মানের ঘটনায় ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল বাদী হয়ে বরইতলী সিকদারপাড়া এলাকার মৃত আব্দুস ছালাম সওদাগরের পুত্র ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ, ভাই ইকরা মুল হক এবং একই ইউনিয়নের পশ্চিম খয়রাতিপাড়া এলাকার মো. আমির হোসেনের পুত্র মো. বেলাল মেস্ত্রিসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ১৫ জুন চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনা পাওয়ার পর উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ দায়েরের বাদী ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল ও অভিযুক্ত বিএনপি নেতা শাহিন মোরাদ গংদের নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করে বিরোধীয় জমিটি সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

এরই প্রেক্ষিতে গত ২১ জুন শুক্রবার বিকালে বাদী বিবাদী দুই পক্ষের দুইজন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষ হয়ে একজন সার্ভেয়ার দিয়ে বিরোধীয় জমিটি পরিমাপ করা হয়। বৈঠকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বাদি-বিবাদী দু’পক্ষকেই বিরোধীয় জমিতে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও জবর দখলকারীরা এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়ি নির্মান অব্যাহত রাখে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করায় যে কোন মুহুর্তে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও জবর দখলকারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল গতকাল ২৫জুন মঙ্গলবার দুপুরে স্থাণীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গত ২১/১২/১৯৪৮ইং সালে আর এস ১৮১ নং খতিয়ানের অংশিদার আব্বাস আহামদের কাছ থেকে ১৫ শতক জমি ক্রয় করেন আমার পিতা মুন্সি ফরোখ আহামদ। পরবর্তীতে ওই জমি আমি ও আমার ভাই অবসরপ্রাপ্ত সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক আবুল কাশেমের নামে বিএস খতিয়ানভূক্তও হয়।

কিন্ত ওই খতিয়ানের অপর অংশিদার আব্দুস ছালাম সওদাগরের পুত্র, বরইতলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ ও ভাই ইকরামুল হক ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে আমাদের জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মান শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নালিশী অভিযোগ দায়ের করলেও ইউপি চেয়ারম্যান গোপনে বিএনপি নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করায় এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে থানায় অভিযোগ দিতে বাধ্য হই।

ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল অভিযোগ করেন, আমি ও আমার ভাইয়ের মালিকানাধীন জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মানের ঘটনার ব্যাপারে বরইতলী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি শাহিন মুরাদ ও তারভাই ইকরামুল হক, একই ইউনিয়নের পশ্চিম খয়রাতিপাড়া এলাকার মো. আমির হোসেনের পুত্র মো. বেলাল মেস্ত্রিসহ আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় অভিযোগ দিলেও কোন ধরনের প্রতিকার মেলেনি। অভিযুক্তরা পুলিশী নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখনো বাড়ি নির্মান অব্যাহত রেখেছে।ভুক্তভুগী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করার পর দেশ স্বাধীন করেছি।

২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামীলীগ আজ ক্ষমতায়। তারপরও স্থাণীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ ও ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটের কাছে আজ আমি ও আমার ভাইয়ের পরিবার অসহায়। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ ও তার ভাই ইকরামুল হক আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল করে বাড়ি নির্মান অব্যাহত রাখে। স্থাণীয় ও সামাজিক কোন বিচারকেই তোয়াক্কা করছেন না ওই বিএনপি নেতা ও ভাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা কালে একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি জবর দখল করে বিএনপি নেতার বাড়ি নির্মানের বিষয়টি আমাকে হতভাগ করেছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বরইতলীতে বিএনপি নেতা কর্তৃক এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়ে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিএনপি নেতা ,ভাইসহ অভিযুক্ত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।